শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ | ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

মক্কার সততা ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ

কাজী জহিরুল ইসলাম :   |   বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

মক্কার সততা ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ

প্রাইভেট স্পেস বলে যে একটা বিষয় আছে তা বাংলাদেশে একেবারেই দেখা যায় না, এখানে, সৌদি আরবেও তা দেখছি না। ইওরোপ এবং আমেরিকায়, মানে উন্নত পৃথিবীতে, আপনি হয়ত রেস্টুরেন্টে দুজনের একটি টেবিলে একা বসে আছেন, অচেনা কেউ এসে অন্য চেয়ারটিতে বসবে না। বাংলাদেশে আমি দেখেছি রেস্টুরেন্টে প্রচুর ফাঁকা টেবিল থাকা সত্বেও নির্দ্বিধায়, বিনা অনুমতিতে আপনার পাশে এসে কেউ একজন বসে পড়ছে। গায়ে হাত দিয়ে কথা বলায় হয়ত বাড়তি আন্তরিকতা আছে, সেজন্য আপনি একবার জড়িয়ে ধরেন, বুকে বুক মেলান কিন্তু কথা বলার সময় সারাক্ষণ গায়ে হাত দেওয়া, কাঁধে হাত রাখা, বাহু টেনে ধরা, এগুলো আমার কাছে মোটেও ভালো অভ্যাস মনে হয় না। অন্যের প্রাইভেসি ইনভেড করার মতোই লাগে।

বিমানে চড়ার জন্য কিংবা বিমান থেকে নামার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন, জুম্মার নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হচ্ছেন, লাইনে দাঁড়ানো পেছনের জন গায়ের সঙ্গে এমনভাবে ঘেঁষে দাঁড়াবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো আপনার গায়ে ঘষতে থাকবে, যা সভ্য পৃথিবীতে একটি গুরুতর অপরাধ বলেই বিবেচিত হয়।
মক্কাতেও একই অবস্থা। দুপুরে খেতে গেছি আল মারওয়া টাওয়ারে। সেল্ফ সার্ভিসের ফুডকোর্ট থেকে খাবার নিয়ে একটি দুজনের টেবিলে একা বসেছি, প্রথমে একজন পাকিস্তানি যুবক এসে আমার মুখোমুখি বসে পড়লো, কয়েক মিনিটের মধ্যেই আরো একজন এসে একটি বাড়তি চেয়ার টেনে একেবারে প্রায় আমার কোলের ওপরই বসে পড়লো।

শেষবারের মত মসজিদুল হারামে ঢুকলাম, মাগরেবের নামাজ পড়লাম, জানাজার নামাজ পড়লাম। যারা জানেন না তারা হয়ত জানাজার নামাজের কথা শুনে অবাক হচ্ছেন, ভাবছেন কে মারা গেল। মসজিদুল হারামে প্রতি ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পরেই জানাজার নামাজ হয়। আমার ধারণা মক্কায়, এমন কী মক্কার বাইরেও, কেউ মারা গেলে মৃতদেহ মসজিদুল হারামে আনা হয় সবচেয়ে পবিত্র মসজিদের সুবৃহৎ জামাতে জানাজা পড়ার সুযোগটি মুর্দাকে দেবার জন্য। আমি তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়ার সুযোগ পেয়েছি, প্রতি ওয়াক্তেই জানাজার নামাজ ছিল।
হোটেলে ফেরার আগে ভাবলাম যিনি আমার ফোনটি পেয়ে ফেরত দিলেন তাকে এবং তার সহকর্মীদের আরো একবার ধন্যবাদ দিয়ে আসি আর এক কাপ চা খেয়ে আসি। মায়ানমারের লোকটি আমাকে দেখেই একটি হাসি দিয়ে এগিয়ে এলো। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলো, কী খাবেন? আমি বলি, সিঙ্গারা খাবো, অর্ডার দিয়েছি। চা-সিঙ্গারা নিয়ে একটি খালি টেবিল খুঁজে বসে পড়ি। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এক আরব্য যুবক এসে আমেরিকান এক্সেন্টে ইংরেজিতে বলছে, আমি কি আপনার টেবিলে বসতে পারি। ওর এই ভদ্রতায় আমি বেশ অবাক হই।

যুবকের নাম বাশার। গলাটাকে চাপ দিয়ে শ অক্ষরটি এমনভাবে উচ্চারণ করলো, আমি কিছুটা বিভ্রান্ত হই। পরে বাশার আল আসাদের মতো বাশার কিনা জানতে চাইলে সে হাসি দিয়ে বলে, নামটা ওটাই তবে আমি ওর মত না। বাশারের সঙ্গে আলাপ জমে ওঠে, ওর ইংরেজি উচ্চারণ বলে দিচ্ছে উত্তর আমেরিকায় পড়াশোনা করেছে। বাশার জানায়, মন্ট্রিয়লে দীর্ঘদিন পড়াশোনা করেছে। গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফিরে গেছে নিজের দেশ কুয়েতে, এখন ব্যাবসা করছে। তুরস্কেও ওর অফিস আছে। আমদানী-রফতানীর ব্যবসা করে। আলাপের এক পর্যায়ে আমাকে ওর বিজনেস কার্ড দিয়ে বলে তুরস্ক থেকে কিছু আমদানী করতে চাইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

আমার পরিচয় জানার পরে বাশার কিছুটা আমার দিকে ঝুঁকে বলে, কেমন দেখলেন সৌদি আরব? আমি বলি, দুবাইয়ের সঙ্গে যদি তুলনা করি তাহলে অনেক পিছিয়ে আছে। ডিসিপ্লিনের অভাব আছে, স্থানীয়রা ইংরেজিটা একদমই জানে না, ট্যুরিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ বেশ কষ্টকর। এখানকার মানুষদের বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই। মুসলিম বিশ্বই ওদের পৃথিবী। চিন্তা-চেতনায় বিজ্ঞান বেশ অনুপস্থিত। ধর্ম দ্বারা প্রবলভাবে আচ্ছন্ন। মক্কার বাইরে রাস্তাঘাট বেশ নোংরা। তবে একটি জিনিসের খুব প্রশংসা করতে হয়, মানুষগুলো খুব সৎ। অন্যের অর্থ-সম্পদের দিকে হাত বাড়ায় না। এর কৃতিত্ব অবশ্য ধর্মকেই দিতে হবে। হয়ত কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনই ওদেরকে সৎ রেখেছে।

বাশার টিপিক্যাল আমেরিকানদের মত আমার কথা শুনতে শুনতে, ‘আই নো হোয়াট ইউ মিন’ বাক্যটি বারবার বলে যাচ্ছিল। এবার আমার প্রশ্ন করার পালা, বাশারের কাছে জানতে চাই কুয়েত সম্পর্কে, সৌদি আরব সম্পর্কে, এমন কী পুরো মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কেই। প্রথমে বেশ খোলামেলা ভাবেই শুরু করেছিল, রাজনৈতিক সমস্যার কারণে কুয়েত এগুতে পারছে না। ব্যাস, এইটুকু বলেই হঠাৎ যেন ওর হুশ ফিরেছে, এমন একটা ধাক্কা খাওয়ার মত প্রচ্ছন্ন অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে কথা ঘুরিয়ে বলতে শুরু করলো, সৌদি এবং কুয়েত দুটো দেশই প্রকৃত উন্নয়নের কাজ শুরু করেছে, ইনশাআল্লাহ গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। আমি ওকে আসল জায়গায় ফেরাতে চাই, কুয়েতের রাজনৈতিক সমস্যাটা কী? মানুষ গণতন্ত্র চায়?
না, না, তেমন কিছু না। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। রাজতন্ত্র সমস্যা না।
আপনি কি রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত?
না, আমি রাজপরিবারের কেউ না। এই বিষয়ে আমি আসলে কিছু বলতে চাচ্ছি না।
তাহলে রাজনৈতিক সমস্যার কারণে এগুতে পারছে না বলছেন কেন?
সরকার ঠিকই আছে, অন্য জায়গায় সমস্যা।
ব্যুরোক্রেসিতে সমস্যা?
এই বিষয়ে আমি আসলে কিছুই বলতে চাচ্ছি না।
লক্ষ করলাম ঠিক একই রকম কঠোর নীরবতা ওর মধ্যে সৌদি আরব সম্পর্কেও। এটিই কি রাজতন্ত্রের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত একটি জনগোষ্ঠীর কণ্ঠরোধ নয়?
কথা উঠলো ফিলিস্তিন নিয়ে। ইজরাইলের প্রতি ওর উষ্মাটা টের পেলাম কিন্তু একটি বাক্যও সে স্পষ্ট করে ইজরাইল বা আমেরিকার বিরুদ্ধে বললো না। এই পর্যায়ে এসে মনে হলো ও হয়ত আমাকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার লোক ভেবে থাকবে।

এর পরেও আমাদের অনেকক্ষণ গল্প হলো, তবে মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বরাজনীতির কোনো প্রসঙ্গই আর ওঠেনি। হজ, কাবা, আমদানী-রফতানী ব্যবসা এসব নিয়েই কিছুক্ষণ গল্প করে উঠে এলাম। এর মধ্যে ও বার দুয়েক অফার করেছে আমার জন্য কোনো খাবার কিনে আনবে কিনা। এই একটা জিনিস আমি দারুণভাবে লক্ষ করেছি, ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে শুরু করে মক্কায় যার সঙ্গেই ৫ মিনিট কথা বলেছি সে-ই খাবার এবং পানীয় অফার করেছে। ওদের অতিথিপরায়ন সংস্কৃতি প্রশংসার দাবী রাখে।

Posted ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(8189 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1312 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.